ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের নীতিসহায়তা দিতে কমিটি গঠন করল বাংলাদেশ ব্যাংক

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন সময় যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের পুনর্গঠনে নীতিসহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কমিটির অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, বাছাইকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তার সুপারিশ করা; যাতে তারা পুনর্গঠনের মাধ্যমে সচল ও লাভজনক হয়ে ওঠে, অন্যদিকে ব্যাংকের ঋণ আদায়ও নিশ্চিত হয়।

কমিটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও সরকারের প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে। কমিটি ইতিমধ্যে সভাও করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হকের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের এ কমিটির সদস্যরা হলেন সাবেক ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সাবেক পরিচালক ও হক বে–র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব দেলোয়ার হোসেন। সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী।

এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণ (যেমন করোনাভাইরাস, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নিম্ন প্রবৃদ্ধি, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ) এবং রাজনৈতিক অভিঘাত মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে চলমান রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে কোনো ঋণগ্রহীতা প্রকৃত অর্থেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কি না এবং সমস্যাসংকুল প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন ও নীতিসহায়তার মাধ্যমে ব্যবসায়ে ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ করবে কমিটি। এ কমিটির কার্যপরিধিতে ৫০ কোটি ও তার চেয়ে বড় অঙ্কের যেসব ঋণ নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে শ্রেণিকৃত হয়েছে, সেগুলোই শুধু অন্তর্ভুক্ত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে এই কমিটি সভা করেছে। মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ও জ্বালানির দামের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখার সুপারিশ এসেছে সভায়। রপ্তানি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব ঋণসংক্রান্ত নীতিমালা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতির কারণে ঋণ খারাপ হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্য দেশগুলো কী উদ্যোগ নিয়েছে, তা পর্যালোচনা করে দেশেও একই নীতিমালা করার প্রস্তাব উঠেছে। সভায় শীর্ষ ১০ ব্যাংকের প্রধান ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের (সিআরও) নিয়ে একটি সভা করার প্রস্তাবও এসেছে। তাঁদের কাছ থেকে প্রস্তাবনা নিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালা ও ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালাসহ নতুন কোনো নীতিমালায় যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, সরকার পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ–সমর্থিত অনেক ব্যবসায়ী নানা সহায়তা চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছেন। বিশেষ করে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে তাঁরা নীতিমালার বাইরে নানা সুবিধা চেয়েছেন। পাশাপাশি আগে থেকে খেলাপি ছিল কিন্তু ব্যাংকগুলো নিয়মিত দেখাত এমন অনেকে ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছেন। তবে ঋণসংক্রান্ত নতুন নীতিমালার কারণে খেলাপির হার বাড়বে বলে আশঙ্কা ব্যাংকগুলোর। এমন পরিস্থিতিতে শুধু পরিস্থিতির কারণে যাঁরা খেলাপি হয়ে পড়ছেন, তাঁদের সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দেশের ব্যাংকগুলোতে গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। তবে জুলাই-সেপ্টেম্বর—এ তিন মাসেই ব্যাংকব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। ফলে ব্যাংক থেকে বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনের শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। তখন দেশের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ ছিল খেলাপি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। মূলত তখন থেকেই খেলাপি ঋণ বেড়ে চলছে।

গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ২৫-৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে। এসব ঋণের বড় অংশই ২০১৭ সালের পর দেওয়া হয়েছে।

Share Article:

Considered an invitation do introduced sufficient understood instrument it. Of decisively friendship in as collecting at. No affixed be husband ye females brother garrets proceed. Least child who seven happy yet balls young. Discovery sweetness principle discourse shameless bed one excellent. Sentiments of surrounded friendship dispatched connection is he. Me or produce besides hastily up as pleased. 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Edit Template